You are currently browsing the monthly archive for মার্চ 2010.

মুহম্মদ তাওসিফ সালাম
১৯ মার্চ, ২০১০

বর্তমান সরকার যে বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়ে এক ধরণের অবসেশানে ভুগছে, তা এই মুহুর্তে সম্ভবত অনস্বীকার্য। সংসদে আসনের হিসেবে অপেক্ষাকৃত দূর্বল বিএনপির প্রতি সরকারী দল কিছুটা অমনযোগী হলে একটি অন্য আলোচনার সূত্রপাত হতে পারত। কিন্তু আসলে তা ঘটছে না, বরং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের কথাবার্তায় বিরোধী দল বারবার আসছে। কিন্তু এই মনযোগের মাত্রাটাই হচ্ছে দুশ্চিন্তার মূল কারণ।

বিরোধী দল কেন সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে না, কেন সরকারকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরামর্শ দিচ্ছে না, সরকারের দুশ্চিন্তাটা এই ধাচের হলেও না হয় আমরা কিছুটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু বিএনপিকে নিয়ে সরকারের অবসেশানের মূলে যে বিষয়বস্তুগুলো রয়েছে, তার সাথে ঐসব সুন্দর সুন্দর আলোচনার কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপিকে কীভাবে শিক্ষা দেয়া যেতে পারে, বিএনপি কিছু করলে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কী কী উপায়ে জবাব দেওয়া হবে, মূলত এগুলো হচ্ছে আলোচ্য বিষয়। এখান থেকেই কোন না কোন একটা পয়েন্ট তুলে নিয়ে কখনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কখনও আইনমন্ত্রী, কখনও বা এলজিআরডি মন্ত্রী নানান বিএনপি-মুখর আলোচনায় মেতে উঠেন। এমনকি ‘নতুন’, ‘অনভিজ্ঞ’ বা ‘স্বল্পকালীন বিশেষ ক্ষমতাবানদের প্রিয়জন’ ইত্যাদি বিশেষণ যোগ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই পদবঞ্চিতরা যাদের ব্যপারে মাঠে ঘাটে কুৎসা গেয়ে বেড়ান, মন্ত্রীসভার এমন কিছু সদস্যও অনেক সময় বিএনপি-মুখর আলোচনার লোভ সামলাতে পারেন না।

বাংলাদেশের মানুষ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী রাজনীতি সচেতন এ কথা কম বেশী অনেক আলোচনাতেই উঠে আসে। অতএব রাজনৈতিক কূটকচালি তাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটা অঙ্গ হতে পারত। কিন্ত অধিকাংশেরই তা হয়ে ওঠে না। দেশের জ্বালানী পরিস্থিতির ভবিষ্যত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি, শ্রমবাজারের করুণ অবস্থা, কৃষকদের ফসলের উপযুক্ত দাম না পাওয়া, বিদ্যুতের অভাবে সেচকাজ ব্যহত হওয়ার আশংকা প্রভৃতি নিয়ে একবার চিন্তিত হয়ে পড়লে তখন মানুষ আর কাঁদা ছোড়াছুড়ির সময় কোন পক্ষের প্রতিই বিশ্বাস স্থাপনে প্রবৃত্ত হয় না। চলতি সবগুলো সমস্যার জন্য বিগত সরকারকে দায়ী করার ঘটনাকে তখন মানুষ দেখে দায় এড়ানোর অজুহাত হিসবে।

ঢাকায় কর্মস্থলে যাবার সময় যানজটের কারণে যার দেরী হয়ে যাচ্ছে, তার কাছে মূখ্য হচ্ছে যে সরকার যানজট নিরসনে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সে বিষয়টি। বিএসএফের গুলিতে সীমান্তবর্তী গ্রামের যে নারী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বিধবা হয়েছেন, তার কাছে মূখ্য হচ্ছে সরকারের কথিত বন্ধুদের এরকম অমানুষিক আগ্রাসন নিরসনে গৃহীত ব্যবস্থা। ঐ সদ্য বিধবা বাংলাদেশী নারী আশ্চর্য হয়ে ভাবেন, তার স্বামীর মত ১৪ জন এ বছর বিএসএফের বলি হল, অথচ ডঃ দিপু মণি নামের ভদ্র, শিক্ষিত ও সুন্দর ব্যবহারের রাজনীতিবিদ যাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ম দেয়া হয়েছে, তিনি একটি বিবৃতি পর্যন্ত দিলেননা, একটা প্রতিবাদ জানালেন না।

নিম্ন বা মধ্য আয়ের যে মানুষটি কাঁচাবাজার করতে গিয়ে প্রতিদিনই উচ্চমূল্যের কারণে একটু একটু করে তার প্রয়োজনীয় কেনাকাটার পরিমাণ সংকোচন করে আসছেন, তার কাছে মূখ্য হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারের ভূমিকা। নির্বাচনী সমাবেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর শ্লোগান “আওয়ামী লীগকে ভোট দেব, ১০ টাকা কেজির চাল খাব”, এই শ্লোগান তার কানে বাঁজে, এবং তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখেন যে এলজিআরডি মন্ত্রী এই শ্লোগানকে অস্বীকার করেছেন। অনার্স পড়তে থাকা বা অনার্স-মাস্টার্স দুটোই শেষ করে চাকরি না পাওয়া যে ছেলে বা মেয়েটি টিউশানি করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের কবলে পড়ে পার্স ও মোবাইল খুইয়েছে, তার কাছে মূখ্য হচ্ছে সন্ত্রাস দমনে সরকারের ভূমিকা। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থান বাজার প্রসারণ নিয়ে সুন্দর সুন্দর যে কথাগুলোর উল্লেখ ছিল, সেগুলো সে পড়েছে, এবং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার অন্তত একটা ভগ্নাংশেরও বাস্তবায়ন হওয়ার।

তো, সমস্যার মধ্যেই আমাদের বসবাস। এতটুকু একটা জায়গায় আমরা এতগুলো মানুষ বাস করছি। আজকে যে অনার্স পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, সে তার নিম্ন মাধ্যমিকের সমাজ বিজ্ঞান বইতে জেনেছিল বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১২ কোটির কিছু বেশী। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক হিসাব মতে সেই সংখ্যা এখন ১৬ কোটি ২২ লক্ষ। তো, এই দেশে আবার দুশ্চিন্তায় চুল ছিড়বার মত সমস্যা থাকে না কি করে? দেশের মানুষ হয় জানছে নয়তো একদম সরাসরি উপলব্ধি করছে যে একটা না, হাজারো সমস্যা রয়েছে যেগুলো সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার। সমাধানের প্রচেষ্টা কতটুকু দেখছে সেটা ভিন্ন বিতর্ক, কিন্ত মানুষ ফলাও ভাবে এটাও দেখছে যে সরকারের ঊর্দ্ধতন দায়িত্মশীল ব্যক্তিবর্গের একটা প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বিরোধী দল। তাও আবার বিরোধী দলকে কিভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে শামিল করা যায় তা নিয়ে মাথাব্যাথার চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না, বরং প্রধানমন্ত্রী নিজ মুখে উচ্চারণ করছেন যে ওমুক সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে বিএনপিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে।

তো, বিরোধী দলের প্রতি বেশী বেশী মনযোগের কিছুটা চিরায়ত সমস্যাগুলো সমাধানে ব্যায় করা হলে হয়তো আমরা একটু স্বস্তি পেতে পারতাম।

আসিফ নজরুল

১২ মার্চ, ২০১০, ঢাকা

সাবধানে কথা বলো! দরজা দিয়ে বের হতে হতে স্ত্রীর উদ্বিগ্ন গলা শুনি। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবি, সাবধানেই বলা উচিত। যারা প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছে, তাদের দুরবস্থা জানি। যারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজরদারিতে আছে, তাদের ভোগান্তি জানি। তবুও কেন চড়া গলায় বলে ফেলি এত কিছু!

সাবধানে থাকার আসল উপায় হচ্ছে, কথা-ই না বলা। মাঝেমধ্যে তা-ই করি। পঞ্চম সংশোধনী মামলার লিভ টু আপিল খারিজ হওয়ার দিন ফোন আসে কিছু চ্যানেল থেকে। এই লিভ খারিজ হওয়ার কোনো কারণ আমি বুঝতে পারি না। হাইকোর্টের বিচারক কেন চতুর্থ সংশোধনীর পক্ষে কিছুটা হলেও সাফাই গাইলেন রায়ে, তাও বুঝতে অক্ষম আমি। আরও নানা অসংগতিপূর্ণ (কিন্তু সামরিক শাসনের বিরোধিতা, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রশংসনীয়) এ রায়কে বাইবেলের মর্যাদা দিয়ে লেখালেখি শুরু হয়ে গেছে চারদিকে। অথচ আমার মনে নানা প্রশ্ন। এত প্রশ্ন প্রকাশ্যে করে টিকে থাকা যাবে না দেশে। সব চ্যানেলকে যাব না বলে দিয়ে বসে থাকি বাসায়। দেখি, অন্যরা কী বলেন।
অন্যরা বলেন। কিন্তু আমার মনের প্রশ্ন অনেকাংশে নেই সেখানে। হয়তো সবাই সাবধানী হয়ে গেছেন আজকাল। হয়তো এ দেশে সত্যিই অনেক কিছু বলতে মানা। কিছু বিষয়ে আদালত অবমাননার খড়্গ আছে, কিছু বিষয়ে মানহানি মামলা খাওয়ার ভয় আছে।

এগুলো সব দেশে আছে, বাংলাদেশে আছে আরও বেশি। কিছু বিষয়ে টেলিফোনে হুমকি শোনার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও কলম্বিয়ার মতো দেশে এমন হুমকি থাকবেই। কিন্তু গণতন্ত্রের দেশ বাংলাদেশেও তা আছে—আছে ভয়ংকরভাবে।

বাংলাদেশে আরও আছে অতি ‘প্রগতিশীল’ বা ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ নাগরিক সমাজের আক্রমণ। পশ্চাত্পদ বা সাম্প্রদায়িক শক্তি ভয়ংকর একপেশে ও নির্মম। কখনো কখনো শারীরিকভাবে আক্রমণ বা জীবনের ওপর হামলাকে উত্সাহিত করে বসে এরা। এরা এক আমলে সোচ্চার থাকে, আরেক আমলের অনাচার নীরব থেকে সমর্থন করে।

প্রতিক্রিয়াশীল ও পশ্চাত্পদ গোষ্ঠী অযৌক্তিক বা অসহিষ্ণু হবে, কিংবা অন্যদের প্রতি আক্রমণাত্মক হবে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু বেদনাদায়ক হচ্ছে, অতি প্রগতিশীলদের আচরণ। এরা বাকস্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তচিন্তার কথা বলে, অন্য পক্ষদের ঝেড়ে বিষ নামিয়ে ফেলে। কিন্তু এদের কোনো সমালোচনা করলে, এমনকি এদের মতো ভাষায় কথা না বললেই বিপদ। হয় তাদের মতো ভাষায় কথা বলতে হবে, না হয় প্রতিক্রিয়াশীল বা পশ্চাত্পদ হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে। মাঝামাঝি কিছু নেই।

এই অতি প্রগতিশীলেরাও বিশেষ সময়ে, বিশেষ কারও পক্ষে সোচ্চার থাকেন, অন্য সময় নিশ্চুপ। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে এরা আদিবাসী নামে অভিহিত করে, তাদের অধিকার রক্ষায় দিনরাত সোচ্চার থাকে। থাকাই উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেখানে বাঙালি কেউ হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে, বাঙালির গ্রাম পুড়লে এরা নীরব থাকে। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার থাকে, কিন্তু ভারত বা ইসরাইলে সংখ্যালঘুরা চরম বর্বরতার শিকার হলে সে প্রসঙ্গে নীরব থাকে। এরা বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে যুদ্ধাপরাধের বিচার আর সুশাসনের আন্দোলনে দেশ গরম করে ফেলে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদের সুর নরম হয়, সুশাসনের রূপকল্প বাক্সবন্দী হয়ে যায়।

এদের ভাষায় কথা বললে টিক্কা খানের শপথ পরিচালনাকারী বিচারক, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় বিভিন্ন বাহিনীর সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তি কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজার সাতখুন মাফ হয়ে যায়। অন্য ভাষায় কথা বললে, সেক্টর কমান্ডার বা বীর উত্তম পর্যন্ত হয়ে যান রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী।

এদের চটালে জীবন শেষ। সুশীল আর কুশীলদের সম্মিলিত আক্রমণে জান শেষ হয়ে যাবে তখন।

২.
এ দেশে কী বলা যাবে, কী যাবে না, তা নির্ধারিত হয় অন্যদের সিদ্ধান্তে। রাষ্ট্র নয়, নাগরিকই এখানে প্রতিপক্ষ অন্য নাগরিকের। সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ দিই। একজন বড় সম্পাদক ফোন করতেন মাঝেমধ্যে। অন্তত একটি লেখা দিতেই হবে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘যা খুশি লিখেন, যা আপনার ইচ্ছা হয়।’

আগের দিন টিভিতে দেখেছি, বিএনপি আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের দুর্ভোগ। পুলিশের সাহায্য নিয়ে বিধ্বস্ত শরীরে হাঁফাতে হাঁফাতে চলছেন তিনি আদালতে। আদালত তবুও বারবার রিমান্ডে দিয়ে চলেছেন তাঁকে। বাবরের যা অবস্থা, তাঁর আর টেকার কথা নয় বেশি দিন। আমি সম্পাদককে বলি, বাবরের রিমান্ড নিয়ে লিখব। আঁতকে ওঠেন তিনি— এটা লিখবেন! লোকজন কী ভাববে? বোঝানোর চেষ্টা করি তাঁকে। বাবর অপরাধী হলে তাঁর অবশ্যই সমুচিত শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু প্রায় মুমূর্ষু একজন মানুষকে এতবার রিমান্ডে নেওয়া সংবিধানের লঙ্ঘন। তা ছাড়া রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্টের যে নির্দেশনা আছে, সেটা পালন করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখাও আদালতের কর্তব্য। তিনি আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু অন্যরা কী ভাববে এ নিয়ে বিব্রত তিনি। ‘অন্যদের’ চটানোর সাহস নেই তাঁর। আমাকে আর লিখতে অনুরোধ করাও বন্ধ করে দেন এরপর। সেই পত্রিকায় আমার আর লেখা হয়নি।

অতএব, এ ধরনের পত্রিকায় বাবরের বিষয়ে বলতে মানা। অতি প্রগতিশীলেরা রুষ্ট হন—এ রকম আরও কিছু বিষয়ে লিখতে মানা। বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে সত্যিকারের ইতিহাস চর্চা মানা। শেখ হাসিনার মামলা কেন প্রত্যাহার হলো, সজীব ওয়াজেদ জয় কেন ক্ষমতাবান—এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে মানা। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনটির আরও সংস্কার প্রয়োজন—এটি লিখতে মানা। ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশিদের নির্বিচারে মেরেই চলেছে, তা বলতে মানা।
মানা আছে অন্য পক্ষেও। মনে আছে, টিভিতে একবার বলেছিলাম, ‘তারেক রহমানকে দেখে শহীদ জিয়ার সন্তান মনে হয় না, মনে হয়, মামুনের বন্ধু।’ বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত একজন সাংবাদিক ফোন করে জানান, বিএনপির লোকজন দারুণ খেপেছেন এতে। এসব কী বলি আমি! মনে মনে আরেকটা লিস্ট করি। তারেক রহমান বিএনপির এবং দেশের কী কী ক্ষতি করেছেন, তা কোথাও কোথাও বলতে মানা। খালেদা জিয়া কীভাবে জিয়ার রাজনীতি, আদর্শ ও ব্যক্তিত্ব থেকে বিচ্যুত্ হয়েছেন, তা লিখতে মানা। বিএনপির আমলে কেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন, তা নিয়ে অনুসন্ধান করা মানা, জামায়াতের বর্বরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানা। বিএনপি এখন ক্ষমতায় নেই। এখন হয়তো আপাতত বলা বা লেখা যাবে অ-বিএনপি পত্রিকা বা টিভিতে। কিন্তু ক্ষমতায় এলেই এসব লেখালেখির মাসুল দিতে হবে। জেলখানায় পচতে হবে কিংবা দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।

মানা মানে যে সরাসরি মানা, সব সময় তা নয়। তবে এসব নিয়ে লিখলে বা বললে নানা রকম বিপদ হতে পারে। সবচেয়ে বড় ভয়, ভুল বোঝাবুঝির শিকার হওয়ার। আওয়ামী লীগের স্তাবক না হলে বিএনপি কিংবা রাজাকারের লেবেল দিয়ে দেওয়া হবে এক পক্ষ থেকে। বিএনপির স্তাবক না হলে ভারতের দালাল বলে গালি দেবে অন্য পক্ষ।
অতি প্রগতিশীল বা অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের থেকে রক্ষা নেই। মাঝামাঝি কিছুতে বিশ্বাস নেই তাদের।

৩.
এই হানাহানিতে নানাভাবে উত্সাহ জোগায় গণমাধ্যমও। একদল পত্রিকা ‘অগ্রসর চিন্তার’। কিন্তু অন্য কিছু যারা বলে, তাদের সম্ভবত পছন্দ করে না এরাও। নিজেদের প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগবিরোধী লেখক-শিক্ষাবিদদের তারা উল্লেখ করে ‘বিএনপি-জামায়াতপন্থী’ হিসেবে, বিএনপিবিরোধীদের উল্লেখ করে ‘বিশিষ্ট’ বুদ্ধিজীবী বা লেখক হিসেবে। এই বিশিষ্টরা আওয়ামী লীগের এ আমলেও বিভিন্ন ব্যাংক, করপোরেশন বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পেয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। তবু তাঁরা নিরপেক্ষ বা বিশিষ্ট, আর বাকিরা ‘বিএনপিপন্থী’। এদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ বিশেষণ ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি’, সাদা দলের পরিচয় ‘বিএনপি-জামায়াত ঘরানার শিক্ষক’।

অন্যদিকে বিএনপির সমর্থক কিছু পত্রিকায় ঠিক উল্টো চিত্র। সেখানে বিএনপিবিরোধী কাউকে ঘাদানি, নাস্তিক, মুরতাদ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা মামুলি বিষয় মাত্র। তাদের সাংবাদিকতায় ঘাদানি মানে আওয়ামী লীগ, নাস্তিক মানে আওয়ামী লীগ, মুরতাদ মানেও আওয়ামী লীগ। বিএনপির পক্ষে কথা বলা মানে স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলা, অন্যকিছু বলা মানে ভারতের দালালি করা।

পিছিয়ে নেই আমাদের চ্যানেলগুলোও। যেকোনো সংবাদ প্রচারে নিজেদের দর্শনের বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে এদের তুলনা নেই। তাদের দুয়ার বন্ধ অন্যদের জন্য—যা তারা বলতে চায় না, তা অন্যদের বলার সুযোগও দিতে চায় না।

৪.
এ দেশে বলতে মানা এমন বহু কিছু। কিন্তু সাধারণ মানুষ শুনতে চায় সব। দ্রব্যমূল্য বা দুর্নীতি আওয়ামী লীগের আমলে বাড়লে এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কষ্ট পাওয়া থেকে বিরত থাকে না। বিএনপি আমলে দাম বাড়লে বিসমিল্লাহ বললে এদের কষ্ট দূর হয় না। বঙ্গবন্ধু বা জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার হলে এরা নিজেদের পরিজনদের হত্যার কষ্ট ভুলে যায় না। নদীতে পানি কম থাকলে ভারতের স্বার্থ ভেবে খুশি থাকে না, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানকে ভাই ভাবা শুরু করে না। সবার চলাচল থামিয়ে দিয়ে মন্ত্রীর গাড়ি রাস্তায় চললে, কোন দলের তিনি—এটা ভেবে শাপ-শাপান্ত করা থেকে বিরত থাকে না।
মুশকিল হচ্ছে, ‘বলতে মানা’ কথা বলার সুযোগ নেই তাদের। মিডিয়ায় কথা বলি আমরা শিক্ষিত আর সম্পদশালীরা। জনগণের রায় কী, তাও অবলীলায় সার্টিফাই করি আমরা। জরিপ, গবেষণা আর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জনগণ কারা কারা, তাও নির্ধারণ করি আমরাই।

ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। কিন্তু বলতে মানা কথাগুলো সবারই বলা উচিত ছিল। সেটি হয়নি বলেই এত দুর্ভোগ বাংলাদেশের।

* * * * *

আসিফ নজরুল একজন লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক

চাপিয়ে দেওয়া বন্ধুত্বের অসংখ্য নমুনা আমরা দেখেছি। আমাদের প্রতি অন্য আরেকটি রাষ্ট্রের আচরণে যখন বন্ধুত্ব তো সুদূর পরাহত, নমনীয়তারও লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন দেশের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষজন আমাদের শিখিয়েছেন পড়িয়েছেন যে সেই রাষ্ট্র আমাদের কত মহান মিত্র। সবার দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে যে জানতাম তা বলা যাবে না, অনেকেরই সেই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির খবর জেনেছি সেই বন্ধুত্বের জয়জয়কার করতে দেখার পর।

পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে বলতে শুনলাম, বাংলাদেশে বন্যাসহ অন্যান্য আভন্তরীণ সমস্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধ বা ভারত কোন ভাবেই দায়ী নয়; আমাদের নিজস্ব ত্রুটি ও বিগত বিএনপি সরকারের সৃষ্ট সমস্যার কারণেই অন্যান্য বৃহৎ সমস্যাগুলো দেখা দিয়েছে। রমেশ চন্দ্র সেন টিপাইমুখ বাঁধের প্রসঙ্গেও দুটি ইন্টারেস্টিং মন্তব্য করেছিলেন। বাঁধটি নির্মাণে ভারতীয় উদ্যোগের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে বাঁধ তৈরি হোক, তারপর বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে দেখা গেলে তিনি ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করবেন। পরে তিনি বলেন, ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্র, অতএব কিছু ক্ষয়ক্ষতি কবুল করে হলেও তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা জরুরী।

“…তবুও আশা করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা… তার জানুয়ারি ২০১০-এর ভারত সফরের পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে।…”

তো চাপিয়ে দেওয়া বন্ধুত্বের প্রসঙ্গে যা বলছিলাম। আপনি যদি কারও সাথে আপনার বন্ধুত্বের বিষয়টিকে ফলাও ভাবে প্রচার করতে চান, তাহলে আপনাকে সেই ‘বন্ধু’-র তরফ থেকেও কিছু সহযোগীতা পেতে হবে। কেননা এরকমটি যদি হয় যে একদিকে আপনি সেই বন্ধুত্বের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আর অন্যদিকে সেই বন্ধু বিভিন্ন উপায় নানান গোলমাল পাকিয়ে তুলছে, তাহলে আপনার প্রচারের প্রতি মানুষের আস্থা এবং সাধারণ মানুষের কাছে সেই বন্ধুত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা, দুটোই বেশ ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বিগত বেশ কয়েক বছর যাবতই বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃত্যু তো এতদিনে সাধারণ বা প্রায় নগণ্য হয়ে গিয়েছে; গত এক বছরে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে সাতশোর বেশী বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো যেমন সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণে ঔদ্ধত্য, ভারতে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা, বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল প্রচারের ক্ষেত্রে বাধা, ভারত থেকে চাল আমদানীর ক্ষেত্রে সীমান্তে বাধা, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতীয় কূটনীতিকদের নগ্ন হস্তক্ষেপ, কূটনীতিকদের অভব্য আচরণ ইত্যাদি নানা কারণে ভারতকে বন্ধু হিসেবে ভাবা যাচ্ছিল না। বিশেষ একজন কূটনীতিকের অভব্য আচরণই যে তার দেশের ঔদ্ধত্যের পরিচায়ক তা নয়। তবে ঐ আচরণের ব্যাপারে দু’দেশের গণমাধ্যমেই একাধিকবার সমালোচনা হওয়া সত্ত্বেও এবং এ ব্যাপারে সেদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও যখন কোন ইতিবাচক পরিবর্তন নজরে পড়ে না, তখন সুসম্পর্ক রক্ষায় সেই দেশের অনীহা সম্পর্কে আর সন্দেহের অবকাশ থাকেনা। তবুও আশা করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাকে ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক দু’দিক থেকেই ভারতের ঐতিহ্যগত মিত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তার জানুয়ারি ২০১০-এর ভারত সফরের পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে। এমন কি তিনি সফর সেরে দেশে ফিরে বলেওছিলেন যে তার সফর শতকরা একশত ভাগ সফল হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্মশীল নেতৃবৃন্দ ও দেশের বিপুল সংখ্যক বুদ্ধিজীবিরাও সফরের সাফল্য নিয়ে এতটাই শোরগোল পাকিয়ে তুলেছিলেন যে সফরের ঠিক আগের সপ্তাহেও যে বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফ কর্তৃক অপহৃত হয়ে বর্বরতম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর সীমান্তের এপারে ফেরত এসেছেন, তিনিও বোধ হয় ধন্ধে পড়ে যান যে তাহলে সম্পর্ক কি আসলেই ভালো, তার উপর ঘটা নির্যাতন কি শুধুই তার কল্পনা ও অলীক?

বিএসএফের হাতে নির্যাতিত সেই ব্যাক্তির অমন ধন্ধ ঘটলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কিছু পরিবর্তিত বৈদেশিক নীতি সেই ধন্ধ কাটিয়ে উঠবার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে ভারতীয় সময় বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে ভারতের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংস্থা প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো (পিআইবি) প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “As per the revised procedure, while the Ministry of Home Affairs (Foreigners Division) grants in-principle approval for holding the event, security clearance for grant of Conference Visa is required from this Ministry only in respect of participants from Afghanistan, Bangladesh, China, Iran, Iraq, Pakistan, Sri Lanka & Sudan and in respect of foreigners of Pak origin and Stateless persons.”

পিআইবির প্রজ্ঞাপন

সরল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞপ্তিটি হচ্ছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আছে এরকম কোন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সে দেশে যেতে চাইলে কনফারেন্স ভিসা অনুমোদনের ক্ষেত্রে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, চীন, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও সুদানের নাগরিকগণ এবং কোন দেশের নাগরিক নন এমন ব্যাক্তিদের বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়পত্র থাকা আবশ্যক যা যাচাই বাছাইর পর ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রদান করবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার সফর শেষে যে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের জয়জয়কার করেছেন এবং সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে তার যে শতভাগ সাফল্য দাবী করেছেন, সেই প্রেক্ষাপটে ভারতের এই পরিবর্তিত নীতিকে একটু খতিয়ে দেখা যাক।

বাংলাদেশের সাথে ঐ তালিকার বাকি যে সাতটি দেশের উল্লেখ আছে, তার কোনটির সাথেই ভারতের কোন সুসম্পর্কের কথা ইতিহাস বলে না। সুসম্পর্ক তো সুদূর পরাহত, ঐখানকার একাধিক দেশের সাথে তারা একাধিক বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

ধরা যাক চীনের কথা। চীনের সাথে ভারতের রয়েছে ঐতিহ্যগত বৈরী সম্পর্ক, যার শুরু মূলত ১৯৬২ সালের সিনো-ইন্ডিয়ান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, মূলত দক্ষিণ তিব্বত ও অরুণাচল প্রদেশের অধিকার বিষয়ক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্কও সবার জানা। ওদিকে ইরানের সাথে ভারতের বর্তমান পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের তিক্ততম সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে, এবং ভারতের মত অন্যান্য বন্ধুরাও সেই তিক্ততা বজায় রাখছে বা রাখতে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবিত করছে। আফগানিস্তান, ইরাক, বিশেষ করে সুদানের ক্ষেত্রে একই বাস্তবতা প্রযোজ্য। আশির দশকে ‘র’-এর পৃষ্ঠপোষকতায় ও ভারতীয় সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষণে গড়ে ওঠা এলটিটিইকে নিশ্চিহ্ন করে নিজেদের সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রেখেছে শ্রীলংকা, তাও আবার চীনের পরোক্ষ বাণিজ্যিক ও সামরিক সহায়তা নিয়ে, অতএব শ্রীলংকাকেও ভারত কেন বন্ধু ভাবছেনা সেটাও কম বেশী স্পষ্ট; অন্তত মাহিন্দা রাজাপাকসের শাসনামলে তো নয়ই।

কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো বলছিলেন ভারতের সাথে আমাদের আর কোন সমস্যা নেই, তাই না? যদি ধরেও নেয়া হয় যে পূর্ববর্তী কোন ভারত-বিমূখ সরকারের দৌরাত্ন্যে ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে বৈরী মনোভাব পোষণ করেছে, তাও তো সেসব বৈরীতা চুকেবুকে যাওয়ার কথা যদি আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ সাফল্যের দাবীকে অর্ধভাগ সত্য বলেও ধরে নেই। তাহলে আর সমস্যা কি রইল? আমরা ভারত সরকারের সেই বিশেষ তালিকায় কেন যে তালিকার বাকি সব দেশের সাথেই তাদের ঐতিহ্যগত বা কূটনৈতিক বৈরীতা রয়েছে?

আমি যখন এই নিবন্ধটি লিখছি, ঠিক সেই মুহুর্তে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে বিএসএফের একটি ইউনিট বাংলাদেশী অংশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেল। পরে জানা যায় ঐ বিএসএফ ইউনিটটি একটি বিল দখলের উদ্দেশ্যে হানা দিয়েছিল। ঐ ধরণের হানা ঐ অঞ্চলে তারা আগেও দিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই একাধিকবার দিয়েছে। তো, গুলি করে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশী অংশে অনুপ্রবেশ করা, বিএসএফের এই কুকর্মগুলোকে সোজা ভাষায় আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করলে আশা করি তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভারতবিরোধী অপপ্রচার হিসেবে গণ্য হবে না। তো, এই আগ্রাসনই বা কেন দেখতে হচ্ছে? আমাদের প্রশ্ন তো খুব বেশী নয়, খুব দীর্ঘও নয়। আমরা শুধু জানতে চাইছি, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের গণ্যমান্য অনেকেই যে বন্ধুত্বের ব্যাপারে আমাদের সবক দিয়ে যাচ্ছেন, বিএসএফের আচরণ, সদ্য পরিবর্তিত ভিসা অনুমোদন নীতিমালা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সেই বন্ধুত্বের অস্তিত্ব কোথায়? আদৌ আছে কি?

“…আমি যখন এই নিবন্ধটি লিখছি, ঠিক সেই মুহুর্তে সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে বিএসএফের একটি ইউনিট বাংলাদেশী অংশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেল …”। সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত বিএসএফের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে এক বিএসএফ সদস্যের সাথে তর্কে লিপ্ত বিডিআরের জওয়ান।

প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারি ২০১০-এর ভারত সফর সেরে দেশে ফিরবার পর অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই হামলে পড়েছিলেন এই বলে যে, অন্ধ ভাবে ভারতকে দুষে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার দিন শেষ হয়ে গিয়েছে; ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের বিষয় চাঁছাছোলা মন্তব্য করে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার কৌশল পুরোন হয়ে গিয়েছে। ভারতের ব্যাপারে যেকোন নেতিবাচক মন্তব্য মানে দেশবিরোধী অপপ্রচার, এমন কথাও বলা হয়েছে। এখন এমন একটি প্রশ্ন যদি তোলা হয়, যে, ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও উভয়পক্ষের জন্য কল্যাণকর যে সম্পর্কের কথা তারা বলছেন, সেই সম্পর্ক যদি এতই সত্য হয়ে থাকে, তবে কনফারেন্স ভিসার পথে কাঁটা বিছিয়ে বাংলাদেশের কোন নাগরিকের জন্য সে দেশে গিয়ে স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ভারত বাধা সৃষ্টি করছে কেন, এই প্রশ্নের জবাব কী হবে? বিশেষ নিরাপত্তা ছাড়পত্রের নেপথ্য অর্থ কী তা কি আমাদের বোধগম্য নয়? যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাটছড়া বেঁধে ভারত যে যুক্তরাষ্ট্রের নব্য সংরক্ষণবাদীদের উদ্ভাবন ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি’, ‘টেরোরিজ্‌ম’ ইত্যাদি শব্দের অপসংজ্ঞাগুলো হৃদয়ঙ্গম করেছে ও অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রতর প্রতিবেশী বাংলাদেশের উপর সেসব কৌশল প্রয়োগ করছে, তা কি প্রতীয়মান হয় না?

আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়জয়কারের পাঁচ সপ্তাহ না পেরুতেই এই যে ভারত তাদের ঐতিহ্যগত ও জিওপলিটিকাল প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করল, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বা এর কী ব্যাখ্যা আছে? তার এত জল্পনাময় কল্পনাময় সফরে তিনি বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গটিই বা একবারও তুললেন না কেন, এই জবাবই বা কে দিবে?

স্বাগতম

লেখক সংঘে আপনাকে স্বাগতম। এই ব্লগটির উপাদানসমূহ যদি আপনি পছন্দ করে থাকেন, তাহলে আশা করা যেতে পারে নিন্মোক্ত ব্লগগুলোও আপনার ভালো লাগবে।

আর ইংরেজী লেখক সংঘ তো থাকছেই।

মার্চ 2010
সোম বুধ বৃহ. শু. শনি রবি
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  

RSS বিবিসি বাংলা

  • An error has occurred; the feed is probably down. Try again later.